Sammobadi Kobita Lyrics । সাম্যবাদী কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম

Admin
0
Sammobadi Kobita Lyrics । সাম্যবাদী কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম

লেখক পরিচিতি:
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলা কাব্যজগতের এক অনন্য শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। মাত্র আট বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে করিব পরিবার চরম দারিদ্র্যে পতিত হয়। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ সালে) গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পাস করে সেখানেই এক বছর শিক্ষাকতা করেন নজরুল। বারো বছর বয়সে তিনি লেটোর দলে যোগ দেন এবং দলের জন্য পালাগান রচনা করেন। বস্তুত তখন থেকেই তিনি সৃষ্টিশীল সত্তার অধিকারী হয়ে ওঠেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪) শুরু হওয়ার পর ১৯১৭ সালে ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে তিনি যোগদান করেন এবং করাচিতে যান; পরে হাবিলদার পদে উন্নিত হন।

১৯২০ সালের শুরুতে বাঙালি পল্টন ভেঙে দিলে তিনি কলকাতায় আসেন এবং পরিপূর্ণভাবে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। সাপ্তাহিক ‘বিজলী’র সংখ্যায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হলে চারদিকে তাঁর কাবিখ্যাতি বিস্তার লাভ করে এবং তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি নবযুগ ও ধুমকেতুসহ বহু পত্র-পত্রিকার সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

তাঁর বিখ্যাত কাব্যসমূহ : অগ্নি-বীণা, বিষের-বাশি, সাম্যবাদী, বর্সহারা, সিন্দু হিন্দোল, চক্রবাক, সন্ধ্যা, প্রলয়-শিখা। এছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। অসংখ্য সংগীতের স্রষ্টা নজরুল। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজল রচনায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ (১৯৬০) উপাধিতে ভূষিত করে। ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, একুশে পদকসহ অসংখ্যক পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হন।
Sammobadi Kobita Lyrics । সাম্যবাদী কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম

সাম্যবাদী 
কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান- 

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান 

যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান। 

গাহি সাম্যের গান! 

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো? 

কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো! 

বন্ধু, যা-খুশি হও, 

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও, 

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক- 

জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, যত সখ- 

কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল? 

দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল! 

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান, 

সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ! 

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার, 

তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার। 

কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে? 

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে! 


বন্ধু, বলিনি ঝুট, 

এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট। 

এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, 

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন, 

মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়, 

এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়। 

এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা, 

এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা। 

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি 

ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’। 

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান, 

এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান! 

মিথ্যা শুনিনি ভাই, 

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।

--------- সমাপ্ত ---------

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)
Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !